রিভিউ লেখক: তানিয়া নিশাত
রাত ভ’রে বৃষ্টি বহু আলোচিত সমালোচিত একটি বই, প্রত্যেকটি মানুষের একটি খোলা আকাশ থাকে হয়তো সে সেখানে প্রান খুলে নিঃস্বাস নেই। মালতি মুখোপাধ্যায় তার ব্যাতিক্রম নয়।হয়তো জয়ন্ত সেই খোলা আকাশ হতে পেরেছিল, পুরো বইটি জুড়ে উষ্ণতার ছড়াছড়ি। নয়নাংশু এর সাথে এক যুগ পার করা মালতি একই ছাদের নিচে দুটি বিছানায়। নয়নাংশুর চাপিয়ে দেওয়া কিছু দায়িত্ব দিন শেষে একই রুটিন বাধা জীবন। সংসার নামক সামাজিকতায় ক্লান্ত হয়ে পড়া দুটি মানুষ, দুটি দেহ।
অন্যদিকে জয়ন্ত এর কেয়ারিং মনোভাব। মন দিয়ে মালতীর সব ছোট খাট বিষয় শ্রবণ করা ধীরে ধীরে সমাজের বাইরে নিজের একটি মানুষ হয়ে যাওয়া সব মিলিয়ে অসাধারণ। দিন শেষে সবাইকে তার আপন নীড়ে ফিরতে হয়, হয়তো এটাই সমাজের কঠিন বাস্তবতা
যদিও বইটি নিয়ে কিছু বির্তক আছে কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে এটা সমাজের খুব বাস্তব চিত্রই বটে
উপন্যাসের প্রিয় কিছু উক্তি
# শরীর টাকে বাদ দিলে প্রেম সত্য হয়, আর যাতে শরীর এর অংশ আছে সেটা প্রেম হতেই পারে না, এই ধারনা তখন ও আমাকে ছেড়ে যায়নি।
# আমি মুহূর্তের জন্য বুঝেছিলাম যে বৃদ্ধ হলেই যৌবন হারাতে হয় না, যদি হৃদয়ে থাকে প্রেম। যেমন ছিল রবীন্দ্রনাথের, যার রচিত শব্দগুলো, বিন্দুর পর বিন্দু, তরঙ্গের পর তরঙ্গ, ঝরে পড়ছে আমার উপর, বয়ে যাচ্ছে আমার উপর দিয়ে।
# যেমন চারদিকের কোটি কোটি মানুষ অন্ধ, মুর্খ, অচেতন তেমনি বেঁচে থাকবে বছরের পর বছর। কিন্তু একটা কথা ঠিক জেনো,ছেড়া তার আর জোড়া লাগবে না। হারানো সুর ফিরে পাবে না কখনো, যে তোমাকে ভালোবাসে না তার সঙ্গে, যাকে তুমি ভালোবাসতে ভুলে যাবে তার সঙ্গে, ভালোবাসা জরুরী নয়, স্বামী স্ত্রী জরুরী, বেঁচে থাকাটা জরুরী, একটা হাত কাটা গেলও বেঁচে থাকে মানুষ, একটা ফুসফুস নষ্ট হলে ও বেঁচে থাকেসে তুলনায় কত ছোট এই ক্ষতি, কত তুচ্ছ এই ঘটনা। ধসূর কালো নয় উজ্জ্বলও নয়, হিংস্র সুন্দর মহৎ নিষ্ঠুর ভোগী ত্যাগী কোনটাই নয় কোটি কোটি মানুষ জীবন অফুরন্ত, মুর্খ অন্তহীন। তুমি এমন কি মহাপুরুষ যে অন্য রকম পাবে? ওঠো নয়নাংশু তাকিয়ে দ্যাখো আজকের এই ঝকঝকে দিনটির দিকে তোমাদের এই নতুন জীবন কে অভ্যর্থনা জানাও।