কতদিন দেখিনা আয়না
❑
তুমি যাওয়ার পরে আমার আর আয়না দেখা হয়না
কতদিন দেখি না আয়না?
নিরবে তোমার চলে যাওয়া-
আর দোষ চাপালে আমায় !
কেন যাবোনা বলো?
তুমি সেদিন আমার বন্ধু ইয়ানাকে দেখে
তাঁর রূপে মুগ্ধ হয়ে গেলে….
অবশ্য ইয়ানা অনেক সুন্দরী ছিল…..
ইয়ানার পাশে যদিও আমাকে মানাতো না!
আমি দেখতে মোটা কালো বেঁটে
চোখ টাও বেশ ট্যাঁরা, তবুও ইয়ানা আমার
ভালো বন্ধুত্ব ছিল…..
তুমি আমাকে ভুলে ইয়ানার প্রেমে হাবুডুবু খেলে
আর, আমি নিঃশব্দে নিভৃতে কেঁদেছি
তোমার ফিরে আসার পথ চেয়ে।
তুমি আয়না দেখোনা;
আর আমি আয়না ভেঙেছি সেদিন
তোমার পছন্দের কালো টিপটিও আর পরা হয়না।
দেখো আজ নির্দ্বিধায় সব দোষ চাপালে আমার কাঁধে…
আমি সেদিনও নিশ্চুপ নির্বাক দর্শক ছিলাম আর
চেয়ে চেয়ে দেখলাম তোমার চলে যাওয়া….
জানো?
ব্যথায় বুকটা দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া আমায়
দিতে পারিনি সেদিন কোনো শান্তনা
সে কি হাহাকার আর অন্তরের ভেতরে শূন্যতা….
সেদিন থেকে ভুলে গেছি আয়না দেখা,
তবে এখন অনেক ভালো আছি আয়না না দেখে !
যতবার যখনই আয়নার সামনে বসতে গিয়েছি,
ততবারই ভেসে ওঠে তোমার ঐ মুখ!
ততবারই লাগে তোমাকে অচেনা….
ঐ দেখো, আমার কথা বলতে বলতে
ভুলে গিয়েছি জানতে তোমাদের কথা
-ইয়ানা আজ কেমন আছে?
-বা তুমি?
তবে আমি বেশ ভালোই আছি।
কাঁটছে বেশ একলা জীবন কষ্টে গড়া
খড়কুটোর মতো, নদীর শ্রোতে ভেসে চলা
এ-ও এক ধরনের আনন্দ বলতে পারো।
এইতো জীবন, এই জীবনে আর ভাঙতে চাইনা
দ্বিতীয় কোনো আয়না…!
করো নিজেকে আবিস্কার
❑
মুক্তি চেয়েছিলাম… মেলেনি মুক্তি!
সেদিনও নির্বাক শব্দ চয়নে চেয়েছিলাম মুক্তি…
সেদিনেও শূন্য হাতে ফিরেছি দ্বারে, মুক্তি মেলেনি।
অশ্রুসিক্ত নয়নে চারপাশে তাকিয়ে দেখি;
কেউ নেই বলার !
হাত বাড়িয়ে দিয়েছি বিশ্বস্ততায় ভরা সে এক নির্ভরতার।
এসো নতুনত্বের পথে!
নতুনত্বে বাঁচো খোশমেজাজে নতুনভাবে
করো নিজেকে আবিস্কার…
সেদিনও দেখেছিলাম আকাশ!
তোমার হাতে হাত রেখে নতুন আশায়।
আকাশ আজও দেখি!
পার্থক্য শুধু আজ তুমি নেই পাশে…
কিন্তু ছুঁতে পারিনি আজও সেই নীলিমায় গোধূলির
আবিরে আঁকানো নীলাঞ্জনার সেই আবছায়া মুখটি…
সেদিন দেখেছিলাম সাগরসংগম;
খুব বেশি কাছে থেকে…
দু’জনে দু’জনার খুব কাছাকাছিই ছিলাম…
সাগর বলেছিল; এসো সংগমে মাতি,
কেন এতো ভয় কোন সে দ্বিধায়?
তখনও ছিলাম নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে
আজও আছি সরোবরে ভয়ে-
চুপিচুপি মনে মনে বলেছিলাম
মানা আছে ‘মানা আছে’
কারণ আমি এক মধ্যবয়সী নারী!
সাগর যতই ডাকুক…
আমাকে নেই হারাতে…
সেলুলয়েডের আলোকসজ্জায়ও আমি
চাইনি জীবন সাজাতে।
চাইনি দূর আকাশে মিটমিট করে জ্বলে ওঠা
নক্ষত্র নামক তাঁরার আলোয় হারাতে!
বড্ড বেশি চাওয়া ছিল…
নিভু নিভু লন্ঠনে সাঝ বাতিটা জ্বালিয়ে
তোমার অপেক্ষায় রব কোনো এক ভরা বর্ষা রাতে।
এখনও হয়নি পূরণ সে চাওয়া!
হৃদয় শুধু শূন্যই রয়ে গেছে…
আজও রয়েছি নিশ্চুপ নির্বাক দাঁড়িয়ে তোমার প্রতিক্ষায়!
নির্ভরতার আশ্বাস দিয়ে
তুমি এসে বলবে, বাড়িয়েছি হাত এক বিশ্বস্ততার…
এই বুকে আছে যত প্রেম ভালোবাসা
তা শুধু আজ তোমারই জন্য….
আজও রেখেছি সেটা নিখাঁদ আন্তরিকতায়
ফয়েল পেপারে মুড়িয়ে।
বোবার কোনো শত্রু নেই
❑
আমি চলতে চেয়েছিলাম পথে
সে পথে কাঁটা ছিল… ছিল নানাবিধ পথ।
আমি সূর্যকে আড়াল হতে দেখিনি
হারিয়েছিলো রাতের গহ্বরে কিছু সময়-কাল
আমি জোছনার সান্নিধ্যে চাঁদকে খুঁজেছি!
ফেরারি হয়েছে চাঁদ…
অমানিশার অন্ধকারে জোনাকিপোকা উড়ে যায়
জ্বল-জ্বল করা আলোয় পরেছি টিপ তার রুদ্র ললাটে
সূর্য ওঠে যখনই, হয় সব ফ্যাকাসে দিনের আলোয়
সাগরে নিমজ্জিত পায়ে ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে
কই? তা দ্যখেনাতো কেউ!
নোনাপানি ছুঁয়ে দেখবো ভেবে
ঝাঁপিয়ে পড়ি সাগরের বুকে,
সাগর তবুও নীরব থাকুক…..
কই? কি পেলে?
যদি জীবন প্রশ্ন করে।
উত্তর মিলবে জীবনে কিছু না কিছুরই….
তবুও বলি, চুপ থাকা ভালো
বোবার কোনো শত্রু নেই।
চিঠি
❑
প্রিয় পথ…
কবে হবে তোমার চলার শেষ?
কবে হবে তোমার সাথে আবার আমার দেখা?
তোমার সবুজে ঘেরা আঁকাবাঁকা পথের ধারে
মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা হিজল বনের
তমাল প্রিয় গাছ গুলি
আমার ভালোবাসাপূর্ণ স্নেহাশিস রইলো।
কেমন আছো তোমরা?
বড্ড জানতে ইচ্ছে করে।
পুকুরের দক্ষিণ পাড়ের আম বাগানটি
কি এখনো আছে?
ঝোড়ো বাতাসে টুপটাপ আমের বোঁটা থেকে
খোসে পড়ার শব্দ পেলেই কে আগে ছুটে গিয়ে
আম কুড়িয়ে নিতে পারে-
চলতো সেই প্রতিযোগিতা!
এখনো মনে হলে হাসি পায়
দুষ্টুমিতে ভরা সেই ছেলেবেলা…
আমি আছি ইট-পাথরের শহরে
আজ আর এখানে প্রণয়ের কোনো লেশ নেই
নেই কোনো প্রাণের ছোঁয়া…
নিষ্প্রাণ প্রাণের স্পন্দনে
নির্মল নিশ্বাস সবুজ শ্যামলে ঘেরা…
বহুদিন দেখিনা গ্রাম,
নেই কোনো যোগাযোগ
মনে হয় ফেলে এসেছি আজ বহুদূর
সেই সোনালী স্বর্ণযুগ।
প্রিয় মাতৃভূমি, আমার প্রিয় গ্রাম
সময় পেলে চিঠি দিও।
যদিও ডিজিটালের ছোঁয়ায় ডাকেনা পিওন
বলেনা আর রানার ছুটেছে রানার
চিঠি আছে চিঠি…
ভুল করে হলেও আজ তমালের চিঠি পেলাম
মিষ্টি বাতাসে, ভেসে এলো কদম ফুলের ঘ্রাণ
জানতে চাও তমাল কে?
হিজল গ্রামে তমালের ছায়ায় কতো যে আঁচা কুড়ি খেলে
সময় করেছি পার…
তবুও ভালো লেগেছে চিঠি দিবসে
তোমার চিঠি পেয়ে।
সত্যি আমি আনন্দে আপ্লূত আর আত্মাহারা
ভালোলাগার মুহুর্তগুলি স্বরণে রেখে
এখানেই ইতি টানছি
প্রিয় সবুজে ঘেরা শ্যামল দেশ
তোমার দীর্ঘায়ু ও শুভকামনায়-
ইতি
তোমার
খেলার সাথী
মল্লিকা