অনির্বাণ সামন্ত পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার বাগনানের চন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা অনিল কুমার সামন্ত এবং সুধা সামন্তর সন্তান অনির্বাণ সামন্ত আদতে একজন তথ্য প্রযুক্তি কর্মী ও এমবিএ (অর্থনীতি) কিন্তু মানুষের কাছে উনি একজন প্রকৃত নিবেদিত প্রাণ সমাজকর্মী বলেই পরিচিত। হাওড়া জেলার আমতা থানার সোনামুই নামে ছোট্ট একটি গ্রামে জন্ম বাইশে মার্চ ১৯৭৬ সালে। গ্রামেরই প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সোনামুই ফাতেসিং নাহার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হন ১৯৯১ সালে। তারপর ১৯৯৩ সালে আমতা পিতাম্বর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় স্বসম্মানে উত্তীর্ণ হন। উনি মাস্টার অফ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সম্পূর্ণ করেন কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে। পিতা-মাতা শিক্ষক-শিক্ষিকা হলেও ছোটবেলা থেকেই জীবন যুদ্ধের কঠিন লড়াইকে জয় করে অনমনীয় জেদ, অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং অভাবনীয় মেধার জোরে মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক উভয় পরীক্ষাতেই অসাধারণ ফল করে জাতীয় বৃত্তির জন্য যোগ্য রূপে মনোনীত হন।
ছোটবেলা থেকেই দুস্থ, অসহায় ও অক্ষম মানুষদের দেখলে তার মন কেঁদে উঠত, চোখ জলে ভরে উঠতো। নিজের টিফিন খরচ বাঁচিয়ে স্কুল যাবার পথে কোন দুস্থ ও অভুক্ত পথচারীকে দেখলে তার জন্য খাবার কিনে দিতেন। আসলে অসহায় ও দুস্থ মানুষদের প্রতি তার এই আকর্ষণ তার পিতা-মাতার সূত্রেই পাওয়া বলা যেতে পারে কারণ ছোটবেলা থেকেই পিতা-মাতাকে দেখেছেন দুস্থ, অক্ষম ও অসহায় মানুষদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে দেখেছেন। একমাত্র দিদি সুপর্ণা সামন্ত, যিনি বর্তমানে খরিওপ হাই স্কুলের শিক্ষিকা সঙ্গে একসাথে ছোটবেলা থেকেই অসহায় অক্ষম ও দুস্থ মানুষদের দুঃখ কষ্ট দেখতে দেখতে উনি সেই মুহূর্তেই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে ভবিষ্যতে বড় হয়ে উনি যে কর্মে ই নিযুক্ত থাকুন না কেন,সারাজীবন অসহায়, দুঃস্থ ,অক্ষম মানুষদের পাশে থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন। সেই থেকেই সমাজকর্মী হিসেবে তার যাত্রা শুরু হয়।
ব্যক্তিগতভাবে মানুষের অসহায় ও দুস্থ মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি দলগতভাবে সুপার সাইক্লোন আম্ফান বা ইয়াসের সময়ই হোক বা কোভিড পিরিয়ডে লকডাউনের সময়ই হোক দুস্থ ও অসহায় মানুষদের জন্য খাদ্য, বস্ত্র এবং প্রয়োজনে বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে সাহায্য করেছেন, সরকারের পরামর্শ মেনে চলতে মানুষকে সচেতন করেছেন । শুধু তাই নয় রাস্তায় অভুক্ত কুকুর বিড়ালদেরও খাবারের ব্যবস্থা করতে সাহায্য করেছেন। পাশাপাশি দূর্গা পূজার সময় দুস্থ মানুষদের হাতে নতুন বস্ত্র এবং শীতে কষ্ট পাওয়া পথচারী ভিক্ষুকদের হাতে কম্বল তুলে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, নিজের জন্মদিনের মতো বিশেষ দিনটি তিনি পালন করতে ভালোবাসেন ইটভাটার অসহায় শিশুদের সাথে অথবা বৃদ্ধাশ্রমে মায়েদের সাথে কেক কেটে খাওয়া-দাওয়া করে এবং বস্ত্রদান করে।
তার এ বছরের জন্মদিনটি তিনি পালন করেন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর জন্য রক্ত দান করে এবং অসহায় মায়েদের মধ্যে খাবার বিতরণ করে। মাতৃ দিবসের মতো বিশেষ দিনও তিনি ছুটে যান বৃদ্ধাশ্রমে মায়েদের সাথে কেক কেটে আনন্দ করে খাওয়া-দাওয়া করে দিনটি কাটাতে। ব্লাড ব্যাংকের রক্ত সংকটের সময়ে নিজেই বছরে দুই তিনবার রক্তদান করেন । এছাড়াও বহু রকম সমাজসেবামূলক কাজ বিনা বায়ে চক্ষু ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির, চশমা প্রদান, মহিলাদের স্বনির্ভর করার জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের সাথে যুক্ত থাকেন। পরিবেশ মূলক কাজ যেমন কচ্ছপ বাজার থেকে কিনে পুকুরে মুক্ত করে দিয়েছিলেন ইত্যাদি।
সম্প্রতি ব্যক্তিগতভাবে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ( প্রতিবন্ধী) শিশুদের জন্য কাজ শুরু করেছি এবং ভবিষ্যতের দুরারোগ্য ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের পাশে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা আছে। সমাজ তথা দেশ ও জাতির প্রতি তার এই অসামান্য অবদানের জন্য এডভাইসারি বোর্ড ( আজ কা প্রহরীর), ক্যাবিনেট মিনিস্টার এবং মিনিস্টার অফ স্টেট ভারত সরকারের উদ্যোগে দিল্লিতে কনস্টিটিউশন ক্লাব অফ ইন্ডিয়ায স্পেশাল এচিভার ক্যাটাগরি ফর মোস্ট ইন্সপায়ারিং সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট বিভাগে অত্যন্ত গর্বের ও সম্মানজনক জাতীয় পুরস্কার ‘রাষ্ট্রীয় গৌরব সম্মান২০২১’ প্রদান করা হয় ৪ঠা সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে প্রখ্যাত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে।
সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বহুমুখী কর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ অন্যতম বিশেষ শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার বাবু জগজীবন রাম ন্যাশনাল সম্মান পদক ২০২২ (১৩ জূলাই ২০২২) প্রদান করা হয় বঙ্গ সংস্কৃতি ভবন (মুক্তধারা) নিউ দিল্লিতে।
১৮ ই সেপ্টেম্বর ২০২২, একক ব্যক্তিত্ব হিসাবে সমাজসেবার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য এবং দেশ তথা জাতির জন্য স্বতন্ত্র বিশিষ্ট অবদানের জন্য শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা স্বরূপ *বঙ্গ গৌরব সম্মানে ভূষিত করা হয় ওয়ার্ল্ড বুক অফ স্টার রেকর্ডস এর উদ্যোগে হোটেল হিন্দুস্তান ইন্টারন্যাশনাল কলকাতায় পদ্মশ্রী নিরঞ্জন গোস্বামী মহাশয়, সুভাষচন্দ্র বোসের বংশধর চন্দ্র কুমার বোস ইত্যাদি প্রখ্যাত এবং মহামান্য অতিথিদের উপস্থিতিতে।
২৩ শে জুলাই ২০২৩ এ ওয়ার্ল্ড বুক অফ রেকর্ডস এর উদ্যোগে হোটেল পার্ক ইন্দোর মধ্যপ্রদেশে ভারতবর্ষ তথা জাতীয় স্তরের অন্যতম শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার ‘রাষ্ট্র প্রেরণা অ্যাওয়ার্ড ২০২৩’ প্রদান করা হয় সমাজসেবার ক্ষেত্রে অতুলনীয় নিরিবিচ্ছিন্ন, বহুমুখী, স্বতন্ত্র বিশিষ্ট অবদানের জন্য হাওড়া তথা পশ্চিমবঙ্গ থেকে মাননীয় শ্রী অনির্বাণ সামন্ত কে।
২৭ শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সেন্টার ফর রিসার্চ স্টাডিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এবং নব্য ফাউন্ডেশন এর যৌথ উদ্যোগে এবং ভারত সরকারের মিনিস্ট্রি অফ কালচার, হোম এফেয়ার্স এবং ওশিনোগ্রাফি বিভাগের সহযোগিতায় দীঘা সায়েন্স সেন্টারের অডিটোরিয়ামে ‘রাষ্ট্রীয় শিক্ষা সম্মান ২০২৪’ এ আমাকে ‘সমাজসেবা বিভাগে’ সম্মানিত করা হয়।
সম্প্রতি ৫ ই মার্চ কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজ অডিটোরিয়ামে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পরিষদের পক্ষ থেকে সমাজসেবা ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য অনির্বাণ সামন্ত কে ‘মহাত্মা গান্ধী শান্তি পুরস্কার ২০২৪‘ আন্তর্জাতিক স্তরের পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
সম্প্রতি ২২ শে মার্চ ২০২৪ রাত্রি ৮টায় তারা নিউজ চ্যানেলে মুখোমুখি অনুষ্ঠানে অনির্বাণ সামন্তর সমাজ সেবামূলক কাজ নিয়ে একটি সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয় ভারত ও বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য।
বহু স্থানীয় পুরস্কার এবং পরপর তিনবার জাতীয় স্তরের পুরস্কারে এবং সম্প্রতি আন্তর্জাতিক স্তরের পুরস্কারে সম্মানিত হওয়ার পর অনির্বাণ সামন্ত বলেন, পুরস্কার অসহায় ও দুস্থ মানুষদের প্রতি দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতা আরও বাড়িয়ে দিল। এইভাবে আজীবন সমাজ সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চাই। ভবিষ্যতে অসহায় দুঃস্থ অক্ষম মানুষদের জন্য আরও বেশি করে কাজ করার বড় পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।