নির্বাচনি ফলাফল
দাদা বাঘ মার্কায় দাঁড়িয়ে ছিলেন।
গ্রামের নির্বাচন, মেম্বারী পদ। পাশ তিনি
করতে পারেননি; তবু নাম রটে গেলো বাঘ।
প্রতাপ বুঝাতে নিজের জমিতে করেছিলেন
একটি বাজার স্থাপন, সে বাজার আজও
বাঘের বাজার নামে খ্যাত।
খাদ্যের চাহিদা মিটে গেলে মানুষ
সুনামের কাঙাল হয়। নাম-সুনাম
জুটে গেলে চায় ক্ষমতা।
আমার বন্ধুর মামা, জীবিকার
অভাব ছিল না, তাই চেয়েছিলেন সুনাম।
পরিচিতি অর্জনের সহজ উপায়
নির্বাচনে দাঁড়ানো।
পরাজয় নিশ্চিত, জনগন চায় না জেনেও
টাকার জোরে নাম লিখালেন
চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর তালিকায়। লটারীক্রমে
মার্কা জুটলো গাভী, মানে গাই।
যখন ফেল মারলেন, গ্রামসুদ্ধলোক বলতে লাগলোÑ
‘গাই ফুতছে…’। নির্বাচনে পরাজিত হওয়া তো
শুয়ে পরারই সমতুল্য।
সেই থেকে তাকে দেখলেই
লোকে বলাবলি করেÑ ‘গাই আইতাছে, গাই।’
সুনাম ছড়াতে গিয়ে লোকটার রটে গেল কতো বদনাম…!
ভাড়াটে খুনির জবানবন্দি
এক হাতে পিস্তল, অন্য হাতে রামদা
জীবন্ত মানুষ কুপিয়ে করেছি ছাতু
কচু কোপানোর কায়দায়। বাহুতে তখন ছিল বল।
এখন দীর্ঘশ্বাসে ভাবিÑ এ জগৎ এমন কেন…!
প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে
ফেলে দেয় থুথু মেরে, যেন চুইংগামের কষ।
কিছু সুখস্মৃতি ভুলতে চাইলেও মাছের কাঁটার আদলে
বিঁধে থেকে গলায় অকারণে মনে পড়ে।
মনে পড়ে মিছিলে ককটেল, আদালতে
মিথ্যা জবানবন্দি, সাত খুন মাফ। মন্ত্রী আমায় পরালেন
নিজহাতে ফুলের মালা।
ভাড়াটে খুনি থেকে প্রমোশন পেয়ে
নামিডাকি নেতা, একেই বলে বীরভোগ্যা বসুন্ধরা।
তারপর এই অধঃপতন। পড়ে আছি অসহায়
পাহাড়ি গোহায় আহত সিংহ, বুকভরা
ক্ষত আর ক্রোধ। ক্ষমতা ফুরিয়ে গেলে এমনই কি হয়…!
জগৎ বড়ই রহস্যময়…! হাতি কাদায় দেবে গেলে
চামচিকারাও মারে লাথি। মুমূর্ষু বাঘের লেজ টেনে
ভেংচি কাটে রাঙামুখো বানর।
বীরত্বে পড়ে ভাটা, তেল ফুরালে যেমন
নিভে যায় বাতি। বাঘের বজ্রকণ্ঠ কালান্তে বিড়ালের মিউ…
এ জগৎ এমন কেন…!
দান প্রত্যাহরণ
এই যে শুনুন। এক ভিখারি হাত বাড়াতেই
দিলাম পাঁচটি টাকা। সবুর তো নেই
তার মুখে…! সে চাইলো যেন আরও দেইÑ
দশ কিংবা পনেরো। অমনি কেড়ে নিয়ে
পাচঁ টাকার নোট রেখে দিলাম নিজ-পকেটেই।
এবং গলাধাক্কাÑ ‘যা ব্যাটা, যা… মন ভরে না
সহজে কেনো তোর…!’Ñ আমার বিশ্বাস রেগে গিয়ে
আপনিও তাই করতেন। অকৃতজ্ঞকে কেউ দান করে না।
আসল কথায় আসি। বিধাতা যখন
আমাদের দেয় কিছু, যেমন সুখ-শান্তি-প্রতিপত্তি
অতৃপ্ত অন্তরে আরও চাই, আরও খুঁজি। হয়তো তখন
ঘটে বিপত্তি। শুনেছি সমস্ত প্রাণিকূল
পশু-পাখি-মাছ-গাছ শুকরিয়ায় মশগুল
সামান্য পেয়েই; তাই আরও পায়। মানুষেরই শুধু
অভাব অভাব স্বভাব। শুকরিয়া নেই বলে
বিধাতা নারাজ হয়ে অর্পিত দান পূনরায় নেন তুলে।